ভারতের ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সিনেমা ‘রক্তবীজ ২’ এবারের পূজায় মুক্তি পেতে চলেছে। অভিনয়ে তার অভিজ্ঞতার বয়স বেশি না হলেও, তার অভিনয়ের প্রতি নেশা অপরিসীম। তবে পেশা হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন সমাজসেবা। দক্ষিণ কলকাতার একজন কাউন্সিলর হিসেবে তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি জনগণের সেবায় নিবেদিত।
অনন্যা বড়পর্দায় প্রথম পা রাখেন দেব অভিনীত ‘প্রধান’ সিনেমার মাধ্যমে, যেখানে তিনি একজন পুলিশ আধিকারিকের চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর ধারাবাহিক ‘মিত্তির বাড়ি’তেও তিনি একই ভূমিকায় দর্শকদের মুগ্ধ করেন। এবার ‘রক্তবীজ ২’-এ তৃতীয়বারের মতো পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এই সিনেমায় অনন্যা গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট ‘রিয়া’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যেখানে তার বসের ভূমিকায় রয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা আবীর চট্টোপাধ্যায়।
অনন্যার অভিনয়ের পেছনে একটি অভিনব গল্প রয়েছে। ২০১২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিল্লিতে তার সাক্ষাৎ হয়। সেখানে রাষ্ট্রপতি ভবন ঘুরে দেখার সুযোগ পান তিনি। এই অভিজ্ঞতা তাকে ‘রক্তবীজ ২’-এর প্রস্তাব গ্রহণে উৎসাহিত করে। এছাড়া নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘বহুরূপী’ সিনেমার প্রচারেও তিনি নানাভাবে জড়িত ছিলেন। তাদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরিচয় এবার কাজের সুযোগে রূপ নিয়েছে।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে ‘রক্তবীজ ২’ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অনন্যা বলেন, “আমার মধ্যে পরিচালকরা পুলিশ অফিসারের ছায়া দেখতে পান। কেন পান, নিজেই বুঝি না।” টালিউডে গুঞ্জন রয়েছে যে, তাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলে নাকি নন্দনে প্রদর্শনের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। এই প্রশ্নে হাসিমুখে তিনি বলেন, “তা-ই যদি হবে, তাহলে আমার অভিনয়ে আসার আগের ছবিগুলো কী করে নন্দনে দেখানো হয়েছে? নন্দনে সিনেমা দেখানো হবে কিনা, সেটি সিনেমার মানের ওপর নির্ভর করে।”
আবীর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আবীরকে ঘিরে আমার কোনো ‘ফ্যান্টাসি’ নেই। রাজনীতির কারণে এত কাছ থেকে বাস্তব দেখেছি যে, কাউকে নিয়ে বিশেষ অনুভূতি জাগে না।” তবে তিনি লক্ষ করেছেন আবীরের সহজ-সরল ব্যবহার। তিনি বলেন, “নায়কের কোনো তারকাসুলভ আচরণ নেই। সবার সঙ্গে সমানভাবে মেশেন এবং যেকোনো ব্যাপারে সহযোগিতা করেন।” হাসতে হাসতে তিনি যোগ করেন, “আবীর আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা। শুটিংয়ের ফাঁকে জানতে চেয়েছি, ভোটটা আমাকেই দেন তো? শুনে তিনি জোরে হেসে দেন।”
অনন্যা সবসময় নিজের শরীর নিয়ে সচেতন। ফিট থাকতে নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং খাওয়াদাওয়ায় সংযম রাখেন। ‘রিয়া’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাকে ব্যাপক শারীরিক কসরত করতে হয়েছে। তিনি বলেন, “পরিচালকরা জানিয়েছিলেন, প্রচুর দৌড়ঝাঁপ ও অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে। এর জন্য শুধু ট্রেডমিলে দৌড় যথেষ্ট নয়।” তিনি বিশেষ ধরনের শরীরচর্চা করেছেন, যেমন ধোপাদের কাপড় কাচার জায়গায় দৌড়ানো বা লম্বা লাফ দেওয়ার দৃশ্য। এমনকি সাবানপানিতে পিছলে পড়েও তাকে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়াতে হয়েছে।
শট দেওয়ার সময় কি তিনি কখনো আছড়ে পড়েছিলেন? এ প্রশ্নে অনন্যা বলেন, “প্রত্যেকটা পরীক্ষায় আমি পাশ। নন্দিতাদির থেকে শিবপ্রসাদ বেশি খুঁতখুঁতে, আর আবীর তার থেকেও বেশি। একবারে শট ‘ওকে’ হলেও নিখুঁত শটের জন্য একাধিকবার শট দিতে হয়েছে। আমি প্রত্যেকবার সেগুলো করতে পেরেছি।”
তিনি আরও বলেন, শুটিংয়ের সময় নন্দিতা রায়ের দাপট তাকে মুগ্ধ করেছে। “ইন্ডাস্ট্রিতে নারী পরিচালকের সংখ্যা তুলনায় কম। সেখানে নন্দিতাদি নিজের মতো করে কাজ করে চলেছেন, যা দেখে শেখার মতো,” বলেন অনন্যা।