Saturday, August 2, 2025

৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: শাহরুখ-রানীর প্রথম জয়, কিশোর কুমারের অপূর্ণ স্বপ্ন

 ভারতের ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা গত ১ আগস্ট ঘোষণা করা হয়েছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বলিউডে অবদান রাখা শাহরুখ খান এবং রানী মুখার্জি এবার প্রথমবারের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করেছেন। শাহরুখ খান ‘জওয়ান’ ছবির জন্য এবং রানী মুখার্জি ‘মিসেস চ্যাটার্জি বনাম নরওয়ে’ ছবির জন্য যথাক্রমে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন। শাহরুখ এই পুরস্কার ভিক্রান্ত ম্যাসির সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন, যিনি ‘১২থ ফেল’ ছবির জন্য এই সম্মান অর্জন করেছেন। এছাড়া, বিধু বিনোদ চোপড়ার ‘১২থ ফেল’ শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্মের পুরস্কার জিতেছে।

তবে, এই জয়ের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। বলিউডের কিংবদন্তি শিল্পী কিশোর কুমার, ধর্মেন্দ্র, রাজেশ খান্না, দেব আনন্দ এবং মধুবালার মতো তারকারা কখনো জাতীয় পুরস্কার পাননি। বিশেষ করে কিশোর কুমারের ক্ষেত্রে একটি দুঃখজনক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে তিনি দুর্নীতির কারণে এই পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন।

কিশোর কুমারের পুত্র অমিত কুমার এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, তাঁর বাবার ১৯৬৪ সালের ছবি ‘দূর গগন কি ছাঁও মে’ জাতীয় পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়েছিল। এই ছবিতে কিশোর কুমার অভিনেতা, পরিচালক এবং সুরকারের ভূমিকায় ছিলেন, এবং শিশু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমিত কুমার নিজে। অমিত জানান, মন্ত্রণালয় থেকে ফোন করে জানানো হয়েছিল যে ‘হকিকত’, ‘দোস্তি’ এবং ‘দূর গগন কি ছাঁও মে’—এই তিনটি ছবির মধ্যে একটি পুরস্কার পাবে। কিন্তু কিশোর কুমারকে ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা তিনি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছিলেন, “আমার ছবি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়েছে। এসব করতে আমি রাজি নই।”

‘দূর গগন কি ছাঁও মে’ মুম্বাইয়ের সুপার সিনেমায় ২৩ সপ্তাহ চলেছিল এবং দিল্লি-উত্তরপ্রদেশে সিলভার জুবিলি অর্জন করেছিল। পরবর্তীতে কিশোর কুমার ছবিটির রিমেক রাইটস বিক্রি করে দেন, এবং তামিল রিমেক ‘রামু’ জাতীয় পুরস্কার জিতে নেয়। কিন্তু কিশোর কুমার নিজে কখনো এই পুরস্কার পাননি, এমনকি পদ্মশ্রী বা অন্য কোনো জাতীয় সম্মানও তাঁর ভাগ্যে জোটেনি। তবে, তিনি পুরুষ প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ২৮ বার মনোনয়ন পেয়ে ৮ বার জিতেছেন, যা একটি রেকর্ড।

কিশোর কুমারের ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ (১৯৫৮), ‘পড়োসন’ (১৯৬৮), ‘হাফ টিকিট’ (১৯৬২) এবং ‘নৌকরি’ (১৯৫৪)-এর মতো ছবি আজও দর্শকদের মনে অমলিন। ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর মুম্বাইয়ে তিনি প্রয়াত হন, কিন্তু জাতীয় পুরস্কার না পেলেও কোটি ভক্তের ভালোবাসায় তিনি চিরস্থায়ী হয়ে আছেন।

৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে অন্যান্য বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন:

  • শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম: ‘১২থ ফেল’ (বিধু বিনোদ চোপড়া)

  • শ্রেষ্ঠ পরিচালনা: সুদীপ্ত সেন (‘দ্য কেরালা স্টোরি’)

  • শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা: বিজয়রাঘবন (‘পুক্কালাম’), মুথুপেট্টাই সোমু ভাস্কর (‘পার্কিং’)

  • শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রী: ঊর্বশী (‘উল্লোঝুক্কু’), জানকি বোদিওয়ালা (‘ভাশ’)

  • শ্রেষ্ঠ হিন্দি চলচ্চিত্র: ‘কাঠাল: আ জ্যাকফ্রুট মিস্ট্রি’

  • শ্রেষ্ঠ তামিল চলচ্চিত্র: ‘পার্কিং’

  • শ্রেষ্ঠ তেলুগু চলচ্চিত্র: ‘ভাগবন্ত কেসরি’

  • শ্রেষ্ঠ মালায়ালাম চলচ্চিত্র: ‘উল্লোঝুক্কু’

  • শ্রেষ্ঠ গুজরাটি চলচ্চিত্র: ‘ভাশ’

  • শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালনা (গান): জি ভি প্রকাশ কুমার (‘ভাথি’)

  • শ্রেষ্ঠ প্লেব্যাক গায়ক (পুরুষ): পিভিএন এস রোহিত (‘বেবি’)

  • শ্রেষ্ঠ প্লেব্যাক গায়ক (মহিলা): শিল্পা রাও (‘জওয়ান’)

এই পুরস্কারগুলো ভারতীয় চলচ্চিত্রের বৈচিত্র্য এবং শৈল্পিক শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিফলন ঘটায়, তবে কিশোর কুমারের মতো কিংবদন্তিদের পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হওয়ার গল্প ভক্তদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.