Tuesday, July 22, 2025

নাটক শিল্পে সংকট: কাজ কমে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা

 নাটকের শুটিংয়ে প্রতিদিন ১০-১২ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে সংসার চালানো এক অভিনেতা এখন জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত দুই মাসে মাত্র ৮ দিন কাজ করেছেন তিনি, আর ঈদের পর মাত্র ২ দিন শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। পরবর্তী শুটিংয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই অভিনেতা বলেন, “অনেক নির্মাতার সঙ্গে কথা হচ্ছে। ফোন দিয়ে কাজের খোঁজ নিচ্ছি। সবাই বলছে, তাদের হাতে কাজ নেই। প্রতিদিন এভাবে কতজনকে ফোন করা যায়! কাজ এতটাই কমে গেছে যে প্রতিদিন দুশ্চিন্তায় থাকি।”

টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদে গত চার বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম নাটক প্রচারিত হয়েছে। ঈদের পরও নাটক নির্মাণের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। ফলে বেশিরভাগ অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলী শুটিং থেকে দূরে রয়েছেন, এবং অনেকেই বেকার হয়ে পড়ছেন। শুটিং বাড়িগুলোও বুকিং ছাড়া পড়ে থাকছে। এতে কম আয়ের শিল্পী ও কলাকুশলীরা সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মামুন অপু বলেন, “কোরবানির ঈদের পর কাজ কিছুটা কম থাকে। কিন্তু গত চার-পাঁচ মাস ধরে কাজ সাংঘাতিকভাবে কমে গেছে। অনেক সহশিল্পীর সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, এটা করোনার সময়ের মতো। তখন অনেকে সাহায্য চাইতেন, কিন্তু এখন অনেকের সে অবস্থাও নেই।”

রাজধানীর উত্তরার ৩০০ ফিট এলাকায় একসময় প্রায় ১৫টি শুটিং বাড়ি ছিল, যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আলিম বলেন, “লস দিতে দিতে শুটিং বাড়ি কমিয়ে ফেলেছি। আয় নেই, প্রতি মাসে লাখ টাকা গচ্চা দিতে হয়। অনেকের অবস্থা আমার চেয়েও খারাপ। গত এক মাসে বেশিরভাগ বাড়িতে শুটিং হয়নি। এভাবে চললে টিকে থাকা কঠিন।”

প্রোডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ আবু জাফর সম্প্রতি ফেসবুকে লিখেছেন, “দেশে এখন মোট ৯টি ইউনিটে শুটিং হচ্ছে, উত্তরায় কোনো হাউসে শুটিং নেই। বেশিরভাগ সরকারি তথ্যচিত্রের শুটিং।” তাঁর এই পোস্টের নিচে প্রোডাকশন সহকারী রাশেদ লিখেছেন, “সামনে ৯ থেকে শূন্য হয়ে যাবে।” এই সংগঠনের ৮১৭ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ১৫-২০ জনের কাজ চলছে। আবু জাফর বলেন, “আমাদের সময়টা খারাপ যাচ্ছে। কাজ না থাকায় অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। কেউ ঢাকায় পান-বিড়ি বিক্রি করছেন, কেউ রিকশা চালাচ্ছেন। গতকাল একজনকে রিকশা চালাতে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, আমিও সম্মানের কথা ভেবে ডাকিনি। এটাই আমাদের অবস্থা।”

ঈদের পর জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, নিলয় আলমগীর, তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভান, মুশফিক আর ফারহানের মতো জনপ্রিয় অভিনেতারাও নিয়মিত কাজে ফিরতে পারেননি। কেউ ছুটিতে থাকলেও কেউ ভালো বাজেটের প্রকল্পের অপেক্ষায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শীর্ষ অভিনেতা বলেন, “আগে মাসে ৫০ জন প্রস্তাব দিতেন, এখন ২০ জন দেন। তাদের মধ্যে ৪-৫টি কাজ করি। তবে বাজেট আগের চেয়ে কমেছে।” ‘চলো হারিয়ে যাই’-এর পরিচালক হাসিব হোসাইন বলেন, “অন্যদের কথা বলতে পারব না। আমি মাসে একটা বা দুই মাসে একটা কাজ করি, আগের মতোই চলছে।”

নাট্য প্রযোজক সমিতির নেতা সাজু মুনতাসির জানান, কিছু কাজ হচ্ছে, তবে বেশিরভাগ চ্যানেল এখন এক ঘণ্টার নাটক প্রচার করছে না। ফলে ইউটিউবের ওপর নির্ভর করে নাটক তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সেখানেও বেশিরভাগ প্রযোজক লগ্নি ফেরত পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, “চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন পাচ্ছে না, স্পনসরের সংকট রয়েছে। ইউটিউব থেকে আয় কমেছে, ব্র্যান্ডিং নেই। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সামনে লগ্নি হবে। সবাই স্থিতিশীল অবস্থার অপেক্ষায়।”


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.