রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা দেশে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর সংগীত ও বিনোদন জগতেও নেমেছে নীরবতা। জনপ্রিয় গায়ক ইমরান মাহমুদুল সাময়িকভাবে গান প্রকাশে বিরতি নিয়েছেন, এবং অভিনেতা আরশ খান চলতি সপ্তাহে তার নাটক সম্প্রচার না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত সোমবার (২১ জুলাই ২০২৫) উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি চীন-নির্মিত এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ জেট বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু শিক্ষার্থী। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ, যাদের অনেকেই গুরুতর পোড়া জখম নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, এবং পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ তৌকির ইসলাম জনবহুল এলাকা এড়াতে চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।
ইমরান মাহমুদুলের শোক ও বিরতি
দুর্ঘটনার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে নীরবতা বিরাজ করছিল। বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেলে ইমরান মাহমুদুল তার ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন এবং ক্যাপশনে লেখেন, ‘দ্যা শো মাস্ট গো অন।’ তবে একজন ভক্তের আবেগঘন মন্তব্যে তিনি সাড়া দেন। ভক্তটি লেখেন, “ইমরান ভাইয়া, এক সপ্তাহের আগে কোনো গান রিলিজ কইরেন না। মনটা ভালো নেই কারও। ছোট ছোট বাচ্চাদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।” ইমরান জবাবে বলেন, “এক সপ্তাহ কেন, এই মাসেই কোনো গান ছাড়া হবে না।”
এর আগে মঙ্গলবার ইমরান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, “ট্রমা কাজ করছে। আকাশ দিয়ে বিমানের শব্দ শুনলেই ভয় লাগছে। ঘুম আসছে না। আল্লাহ সহায় হোক।” এই পোস্টে তিনি দুর্ঘটনার পর তার মানসিক অবস্থার কথা প্রকাশ করেন।
আরশ খানের আহ্বান
জনপ্রিয় অভিনেতা আরশ খানও এই দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় চলতি সপ্তাহে তার কোনো নাটক সম্প্রচার না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শোক প্রকাশ করে দেশের এই কঠিন মুহূর্তে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
অন্যান্য শিল্পীদের শোক
ইমরান ও আরশ ছাড়াও অন্যান্য শিল্পীরা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে শোক প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে শোকবার্তা ও দোয়ার মাধ্যমে তারা নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
জাতীয় শোক ও তদন্ত
এই ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার মঙ্গলবারকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস শোক প্রকাশ করে বলেন, “এই দুর্ঘটনায় বিমানবাহিনী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক এবং স্কুলের কর্মীদের ক্ষতি অপূরণীয়। এটি জাতির জন্য গভীর বেদনার মুহূর্ত।” তিনি দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে এই দুর্ঘটনা নিয়ে ব্যাপক শোক প্রকাশ করা হয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ছোট ছোট বাচ্চাদের এমন মৃত্যু দেখে বুক কেঁপে উঠছে।” আরেকজন লিখেছেন, “মহান আল্লাহ আমাদের ছোট ভাইবোনদের হেফাজত করুন।” এছাড়া শিক্ষার্থীরা সঠিক মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ এবং প্রশিক্ষণ পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
দেশ এখন শোকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, এবং শিল্পী ও জনগণ একযোগে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রার্থনা করছেন।