মৃত্যুর এক বছর পূর্তিতে বৃহস্পতিবার পারিবারিকভাবে আয়োজন করা হয়েছে মিলাদ ও দোয়ার। বিকেলে কবর জিয়ারতে যান পরিবারের সদস্যরা।
শাফিন আহমেদের বড় ছেলে আজরাফ আহমেদ অজি বলেন, “বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর সব আয়োজন নিজেদের মধ্যে করছি। আজ সারাদিন বাবার স্মৃতিগুলো ঘুরেফিরে মনে পড়ছে।”
শাফিন আহমেদ সবার কাছে এক ব্যান্ড তারকা হলেও পরিবারের কাছে ছিলেন এক ‘ফ্যামিলিম্যান’। অজির ভাষায়, “ছোট ছোট আয়োজনেও বাবাই ছিলেন প্রাণ। আমরা যা-ই শেয়ার করতাম, তিনি উতসাহ দিতেন। কখনো বিরক্ত হতেন না।”
কনসার্টের ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানদের খোঁজখবর নিতেন শাফিন। অজি বলেন, “উনি সবসময় ফোনে বা মেসেজে যুক্ত থাকতেন। আমরা দেরিতে উত্তর দিলে কষ্ট পেতেন। ওনি শুধু বাবা ছিলেন না, বন্ধু ছিলেন আমাদের। এই অভাবটা প্রতিদিনই অনুভব করি।”
নিজেও সংগীতচর্চায় যুক্ত অজি বাবার সঙ্গে স্টেজ শেয়ার করা মুহূর্তগুলোকে জীবনের বড় অর্জন মনে করেন। বিশেষ করে মঞ্চে বাবার সঙ্গে ‘জাদু’ গানটি গাওয়ার স্মৃতি তাকে আজও তাড়িয়ে বেড়ায়।
শেষ সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অজি জানান, “আমি তখন আন্দোলনে ছিলাম, বাবার সঙ্গে কম কথা হতো। একবার ওনার কাছে র্যাপার সেজানের গান পাঠিয়ে বলি— ‘দেখো বাবা, কী দারুণ লাইন’। উনি বলেন, ‘নিজের যত্ন নিও’। এরপরই ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। আর যোগাযোগ করা হয়নি। এই কষ্টটা আমায় অনেকদিন তাড়িয়ে বেড়াবে।”
শাফিন আহমেদ ছিলেন বাংলা সংগীতের দুই কিংবদন্তি ফিরোজা বেগম ও সুরকার কমল দাশগুপ্তের সন্তান। গায়ক, সুরকার ও বেজ গিটারিস্ট হিসেবে তার খ্যাতি বহুদূর বিস্তৃত। বড় ভাই হামিন আহমেদের সঙ্গে মিলে ১৯৭৯ সালে গড়ে তোলেন দেশের অন্যতম ব্যান্ডদল মাইলস।
ইংরেজি গানে যাত্রা শুরু করে পরে বাংলা গানে প্রবেশ করেন। ‘প্রতিশ্রুতি’ অ্যালবামের মাধ্যমে তৈরি করেন বাংলা ব্যান্ড সংগীতের নতুন অধ্যায়। এরপর একে একে ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘প্রিয়তমা মেঘ’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দেন।
শেষ দিকে মাইলস থেকে আলাদা হয়ে ‘ভয়েস অব মাইলস’ নামে গড়ে তোলেন নিজস্ব ব্যান্ড। যদিও ২০১০ ও ২০১৭ সালেও একাধিকবার ব্যান্ড ছাড়ার পর আবার ফিরেছিলেন।
বাংলা সংগীতে অমলিন অবদান রেখে যাওয়া এই কিংবদন্তির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশবাসীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন তার ভক্তরা। আর তার পরিবার বিশেষ করে সন্তান অজি বাবার প্রেরণা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চান দেশের সংগীত ভুবনে।