পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শান্তা অর্থের বিনিময়ে অন্য কোনো দেশে তথ্য সরবরাহ করেছিলেন কি না, তাও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। বিলাসী জীবনযাপনকারী শান্তাকে ভারত-চীন সীমান্তের নাথু লা পাস, দীঘা ও গ্যাংটকে ভিডিও ধারণ করতে দেখা গেছে, যা তদন্তকারীদের সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে। শান্তা বরিশালের বাসিন্দা এবং কলকাতার যাদবপুরের বিজয়গড়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, একজন সফল বাংলাদেশি মডেল ও অভিনেত্রী কেন ভুয়া নথি ব্যবহার করে ভারতে অবস্থান করছিলেন, তার উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।
শান্তার কাছ থেকে দুটি আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ২০২০ সালে বর্ধমানের একটি ঠিকানায় নিবন্ধিত, এবং অন্যটিতে কলকাতার ঠিকানা দেওয়া আছে। এই নথিগুলো কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। পাশাপাশি, একটি ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কর্মচারী কার্ড ও ঢাকার মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অ্যাডমিট কার্ডও উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, শান্তার বন্ধু সুমন চন্দ্র শীলকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশি নাগরিকদের এত সহজে ভারতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া উদ্বেগজনক। আমরা এই নথি সংগ্রহের পেছনের নেটওয়ার্ক এবং সম্ভাব্য জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করছি।” বিজয়গড়ে শান্তার বাসা তল্লাশির সময় পুলিশ সুমন চন্দ্র শীলের আধার কার্ড এবং দক্ষিণ কলকাতার বেহালার আনন্দনগর এলাকার একটি ঠিকানা পায়। জানা গেছে, সুমন বেহালার এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন এবং ওই ঠিকানা থেকে আধার কার্ড সংগ্রহ করেছিলেন। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সুমনকে বহুদিন ধরে এলাকায় দেখা যায়নি। তল্লাশির সময় শান্তার বাসা থেকে বেশ কিছু ব্যাংক-সংক্রান্ত নথিও উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, কলকাতায় একটি হোটেল খোলার পরিকল্পনা করছিলেন এবং এজন্য ব্যাংকঋণ নেওয়ার কথা ভাবছিলেন। হোটেলটির অর্থায়নে কারা জড়িত ছিলেন এবং এতে কোনো অংশীদারি ছিল কি না, তা তদন্ত করছে পুলিশ।
শান্তা বাংলাদেশে বেশ কিছু মডেলিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন এবং ২০১৯ সালে কেরালায় অনুষ্ঠিত মিস এশিয়া গ্লোবাল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি দাবি করেন, তিনি ভারতে একটি তেলুগু ছবিতে কাজ করছেন এবং টালিউডের একজন তারকার সঙ্গে আরেকটি ছবির জন্য কথাবার্তা চলছে।
কলকাতা পুলিশ ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই), নির্বাচন কমিশন এবং পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, যাতে শান্তার ভারতীয় নথির সত্যতা যাচাই করা যায়। তাকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এই ঘটনা ভারতের পরিচয়পত্র ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবৈধ নথি জালিয়াতির বিষয়টি পুনরায় সামনে এনেছে। তদন্তকারীরা এই ঘটনার পেছনে বৃহত্তর কোনো নেটওয়ার্ক বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন।