সম্প্রতি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘লেন্স’ এবং ‘ডেইলি পাকিস্তান’-এর প্রতিবেদনে হুমাইরার মৃত্যুর আগের কিছু ঘটনা নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ৩২ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর মরদেহ গত ৮ জুলাই করাচির ডিফেন্স এলাকার ইত্তেহাদ কমার্শিয়ালের একটি ফ্ল্যাটে অর্ধগলিত অবস্থায় পাওয়া যায়। তদন্তকারীদের ধারণা, তিনি সম্ভবত ২০২৪ সালের অক্টোবরে, অর্থাৎ প্রায় ৮-১০ মাস আগে মারা গেছেন।
তদন্তের জন্য হুমাইরার মুঠোফোন কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্টে (সিটিডি) পাঠানো হয়েছে। ‘লেন্স’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, হুমাইরা সম্ভবত বাথরুম থেকে বেরিয়ে কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান, যা তাঁর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পেতে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হুমাইরার ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে কোনো খাবার ছিল না। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন ছিল। ফুড ডেলিভারি অ্যাপ থাকলেও তা ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। তদন্তকারীরা জানান, ২০২৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার দিকে হুমাইরাকে ক্লিফটনে যেতে দেখা গিয়েছিল। ঘণ্টাখানেক পর তিনি বাসায় ফিরে আসেন। এরপর আর কেউ তাঁকে দেখেনি।
‘ডেইলি পাকিস্তান’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, হুমাইরা চরম আর্থিক সংকটে ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি অন্তত দশজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন, যার মধ্যে তাঁর ভাইও ছিলেন। গত ৭ অক্টোবর তিনি শেষবার মুঠোফোন থেকে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন। ভাইসহ দশজনকে পাঠানো সেই মেসেজে তিনি লিখেছিলেন, ‘হ্যালো, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ কিন্তু কেউই তাঁর মেসেজের জবাব দেননি।
তবে ‘এআরওয়াই নিউজ’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, হুমাইরা আর্থিক সংকটে ছিলেন না। তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল এবং ফ্ল্যাটের ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত পরিশোধ করা ছিল।
এদিকে, একটি নতুন আবেদনের মাধ্যমে শাহজাইব সোহাইল নামে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, হুমাইরার মৃত্যু হত্যাকাণ্ড হতে পারে। তিনি একটি ভিডিও প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যেখানে তাঁর মরদেহ উদ্ধারের পরিস্থিতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। এই আবেদনে হুমাইরার পরিবারের সদস্যদের তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
লাহোরের মেয়ে হুমাইরা ২০১৩ সালে মডেল হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০১৫ সালে ‘জালিবি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় তাঁর। এছাড়া ‘জাস্ট ম্যারেড’, ‘এহসান ফারামোশ’, ‘গুরু’, ‘চল দিল মেরে’র মতো টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। ২০২১ সালে ‘লাভ ভ্যাকসিন’ চলচ্চিত্রে এবং ২০২২ সালে এআরওয়াই ডিজিটালের রিয়েলিটি শো ‘তমাশা ঘর’-এ অংশ নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। ২০২৩ সালে তিনি ‘ন্যাশনাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডস’-এ সেরা সম্ভাবনাময় অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।
হুমাইরার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক, আত্মহত্যা, নাকি হত্যাকাণ্ড—এই প্রশ্নের উত্তর এখনো অধরা।