সম্প্রতি ‘শের’ নাটকের এই অভিনেত্রী একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাতকারে বলেন, “আমি বড় ধরনের ফেমিনিস্ট নই।” তিনি আরও জানান, তিনি পুরুষদের তাদের জন্য নির্ধারিত ভূমিকায় দেখতে চান, যাতে নারীরা শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারেন। তিনি বলেন, “আমি ঘরে থাকতে পছন্দ করি এবং বিল পরিশোধের জন্য লাইনে দাঁড়াতে চাই না। আমি পুরনো সময়ের নারী, যারা ঘরে থেকে শান্তি ও বিশ্রামে থাকতে ভালোবাসতেন।”
এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। অনেকে অভিযোগ করেন, সারা খান নারীবাদী আন্দোলনকে অবমূল্যায়ন করেছেন। রাজনৈতিক ভাষ্যকার রেহাম খানও তার এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। রেহাম বলেন, “সারার আজকের ক্যারিয়ার নারীবাদী আন্দোলনের ফল। ফেমিনিজম না থাকলে তিনি টেলিভিশনে কাজ করার সুযোগ পেতেন না।” তিনি আরও বলেন, “সারার মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দায়িত্বশীলভাবে কথা বলা উচিত, যাতে নারীদের অধিকারের জন্য সংগ্রামের কথা মনে রাখা হয়।”
সমালোচনার মুখে সারা খান ইনস্টাগ্রামে তার ১২.৪ মিলিয়ন ফলোয়ারদের উদ্দেশ্যে একটি বিস্তারিত পোস্ট শেয়ার করেন। তিনি লেখেন, “যখন আমি বলি আমি ফেমিনিস্ট নই, তার মানে এই নয় যে আমি সমতায় বিশ্বাস করি না। আমি নারীদের জন্য সমান সম্মান, সমান অধিকার এবং সমান সুযোগে পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি। আমার ফেমিনিজমের ব্যাখ্যা ভিন্ন। আমি বিশ্বাস করি, একজন নারীর শক্তি পুরুষদের অনুকরণে নয়, বরং তার ঐশ্বরিক নারীত্বকে আলিঙ্গন করার মধ্যে নিহিত।”
তিনি আরও বলেন, “নারীদের ‘রাণীর মতো’ সম্মান করা উচিত। তাদের যন্ত্রের মতো কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়নি। আমরা ঘর তৈরি করার, সন্তান লালন-পালন করার এবং মর্যাদার সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি।” হযরত খাদিজা (রা.)-এর উদাহরণ টেনে সারা বলেন, “তিনি ব্যবসায় সফল ছিলেন, কিন্তু তার বিশ্বাস ও পরিবারের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি কখনো তার পরিচয় হারাননি। আমাদেরও কাজ করার অধিকার আছে, কিন্তু তা আমাদের নারীত্বের বিনিময়ে হওয়া উচিত নয়।”
আধুনিক সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “কেন অফিসে কাজ করাকে সম্মানজনক মনে করা হয়, আর স্বামীর জন্য নাস্তা তৈরি বা সন্তান লালন-পালনকে নিকৃষ্ট মনে করা হয়? একজন নারী শিক্ষিত, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং একই সঙ্গে কোমল ও মর্যাদাপূর্ণ হতে পারেন। তাকে এর মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে না।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ফেমিনিজমের অর্থ নারীত্ব ত্যাগ করা নয়। এটি নারীর পছন্দকে সম্মান করা এবং তার ঐশ্বরিক শক্তিকে মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে হওয়া উচিত।”
সারার এই ব্যাখ্যা সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। অনেকে তার সততা ও ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের প্রতি আনুগত্যের প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ কেউ মনে করেন, তার বক্তব্য নারীবাদের প্রকৃত অর্থকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। এই বিতর্ক পাকিস্তানে নারীবাদ এবং ঐতিহ্যবাহী ভূমিকার মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও প্রকট করেছে।