Thursday, July 24, 2025

তুর্কি সিরিয়ালের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ: ভারতীয় ধারাবাহিককে ছাড়িয়ে দর্শকপ্রিয়তায় শীর্ষে

বাংলাদেশে আশি ও নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় বাংলা ধারাবাহিক নাটক ক্রমশ দর্শক হারায় নব্বইয়ের শেষ দিকে। সেই সময় থেকে ভারতীয় সিরিয়ালের প্রভাব দেশের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমানে সেই জায়গা দখল করেছে বাংলায় ডাবিংকৃত তুর্কি সিরিয়াল। ২০১৫ সালে দীপ্ত টিভি প্রথম ‘সুলতান সুলেমান’ নামে একটি তুর্কি ধারাবাহিক বাংলায় ডাব করে প্রচার শুরু করে, যা রাতারাতি দর্শকদের মন জয় করে।

ইতিহাসভিত্তিক এই ধারাবাহিকটি অটোম্যান সাম্রাজ্যের সম্রাট সুলেমান ও তার স্ত্রী হুররেম সুলতানের জীবন ও শাসনামলের গল্প নিয়ে নির্মিত। মুক্তির পর এটি কয়েক মাসের মধ্যেই টিভি অনুষ্ঠানমালার শীর্ষে উঠে আসে। এর সাফল্যের পর অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেল এবং পেইড ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোও তুর্কি সিরিয়াল প্রচার শুরু করে, যার সবই দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

ভারতীয় সিরিয়াল থেকে দর্শকদের আগ্রহ সরে গিয়ে তুর্কি ধারাবাহিকের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। এতে টিভি চ্যানেল ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দর্শক সংখ্যা বেড়েছে। তুর্কি সিরিয়ালগুলো অটোম্যান ও ওসমানিয়া সাম্রাজ্য, তুর্কি মুসলিমদের জীবনধারা, এবং খেলাফত পূর্ববর্তী তুরস্কের ইতিহাসের ওপর নির্মিত। এসব সিরিয়ালে ইসলামি ভাবধারা এবং মুসলিম শাসকদের ইতিহাস প্রাণবন্তভাবে ফুটে উঠেছে, যা বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তুর্কি সিরিয়ালের জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন গল্পের বৈচিত্র্য, অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, রহস্য, তুরস্কের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাজত্ব ও শাসনব্যবস্থার নান্দনিক উপস্থাপনা, সংলাপ, অভিনয়, সংগীত, পোশাক এবং সেট ডিজাইন। এছাড়া, উচ্চ বাজেটে নির্মিত এই সিরিয়ালগুলোতে বিশ্বমানের প্রযুক্তি, সেট ডিজাইন, আলোক প্রক্ষেপণ, শব্দ সম্পাদনা এবং অ্যাকশন পরিচালনা দর্শকদের মুগ্ধ করে। সুদর্শন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় এবং মাধুর্যপূর্ণ সংলাপ এই সিরিয়ালগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করেছে।
দীপ্ত টিভি সর্বাধিক তুর্কি ধারাবাহিক প্রচার করেছে। ‘সুলতান সুলেমান’ ছাড়াও ‘তুমি আছ সবখানে’ (তুর্কি: হার ইয়ারদে সেন), ‘সূর্যকন্যা’, ‘ভালোবাসা ফিরে এলো’ (তুর্কি: আশ্ক ইয়েনিদেন), এবং ‘গুড ডক্টর’ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘গুড ডক্টর’ অটিজম ও সাভান্ত সিনড্রোম নিয়ে জন্ম নেওয়া এক তরুণ ডাক্তারের গল্প বলে। এছাড়া ‘দিরিলিস: আরতুগুল’, ‘বাহার’, ‘ফাতমাগুল’, ‘সুলতান সুলেমান: কোসেম’, ‘ফেরিহা’, এবং ‘জননী জন্মভূমি’ দর্শকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়। এনটিভিতে প্রচারিত ‘কুরুলুস: উসমান গাজী’ও দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।

মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত ‘বড় ভাই’ (তুর্কি: কারদেসলারিম) চার ভাইবোনের জীবনসংগ্রাম ও পারিবারিক বন্ধনের গল্প নিয়ে নির্মিত, যা ৪০টিরও বেশি দেশে জনপ্রিয়। বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও তুর্কি সিরিয়াল ও সিনেমা প্রচারিত হচ্ছে।

সামাজিক মাধ্যমে তুর্কি সিরিয়াল নিয়ে গ্রুপগুলোতে দর্শকরা আলোচনা ও পোস্ট শেয়ার করছেন। এই সিরিয়ালগুলো পরিবারের সবাই মিলে দেখার উপযোগী হওয়ায় ভারতীয় সিরিয়ালের তুলনায় বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন, ন্যায়বিচার, এবং মিষ্টি ভালোবাসার সাবলীল উপস্থাপনা দর্শকদের মনের সঙ্গে সহজেই সংযোগ স্থাপন করছে। তুর্কি সিরিয়ালের এই জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের বিনোদন জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.