তবে এরপর তাঁর নতুন কোনো কাজের ঘোষণা আসেনি। এই অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তমা বলেন, “আসলে এখনই কিছু বলতে চাই না। একাধিক ছবির বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকদের সঙ্গে একাধিকবার আলাপ হয়েছে। কোন ছবির কাজ আগে শুরু করব, এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে এটুকু বলতে পারি, যা হবে, হয়তো দারুণ কিছুই হবে।”
তমার মতে, ‘দাগি’ ও ‘আমলনামা’ তাঁর ক্যারিয়ারে বিশেষ মাত্রা যুক্ত করেছে। তিনি বলেন, “দুটি ছবির গল্প ও চরিত্র একেবারে আলাদা। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এ ধরনের ভিন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দর্শকও চান অভিনয়শিল্পীকে বিভিন্ন রূপে দেখতে। এতে তাঁদের আগ্রহ তৈরি হয়, পরবর্তী কাজের জন্য অপেক্ষা করেন।”
নিজের অভিনয় সম্পর্কে তমা বলেন, “পর্দায় নিজেকে দেখে ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে, আমি পরিশ্রম করেছি। বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয়ের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা কিছুটা হলেও ফুটে উঠেছে। আমাদের চলচ্চিত্রজগত ছোট, কাজের পরিসর সীমিত। ঈদকেন্দ্রিক বড় বাজেটের ছবিগুলো ব্যবসাসফল হলেও বাকিগুলোর বাণিজ্যিক সাফল্য কম। এ পরিস্থিতিতে পরপর দুটি কাজ প্রশংসিত হলে তা যে কতটা ইতিবাচক, তা বলে বোঝানো যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “আমার যেন দুটো ডানা আছে, কিন্তু ডানা মেলে উড়তে পারছি না। তখন আকাশটাই ছোট মনে হয়। শিল্পীর নিয়মিত কাজ থাকা উচিত। বছরে যদি তিন থেকে চারটি মানসম্মত কাজ করা যায়, তাহলে নিজেকে আরও গড়েপিটে তোলা যায়, দর্শকের ভালোবাসাও মেলে।”
অবসর সময়
চার বছর আগে প্রবাসী এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সংসারজীবনের ইতি টানেন তমা। ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’তে নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ে তুলেছেন তিনি। এরপর ‘৭ নাম্বার ফ্লোর’ দিয়ে আবারও উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন। ‘ফ্রাইডে’, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘আমলনামা’ ও ‘দাগি’—এই কাজগুলোর মাধ্যমে তিনি দর্শকের ভালোবাসা অর্জন করেছেন। ওপার বাংলার পরিচালক অঞ্জন দত্তর ‘দুই বন্ধু’ সিরিজেও অভিনয় করেছেন তিনি।
বর্তমানে শুটিং না থাকায় নতুন গল্প শোনা, সিনেমা দেখা আর নিজেকে সময় দেওয়ার মধ্যেই কাটছে তাঁর দিন। তমা বলেন, “সিনেমা দেখতে খুব ভালোবাসি। সব ধরনের সিনেমাই দেখি—নতুন, পুরোনো, দেশি, বিদেশি। সম্প্রতি ‘সাইয়ারা’ দেখলাম। ছবির নায়িকার অভিনয় দেখে সত্যি মুগ্ধ হয়েছি। ছোট ছোট এক্সপ্রেশন, চোখেমুখে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছেন। ভাবছিলাম, আমি যদি এ ধরনের চরিত্রে কাজ করি, এমন এক্সপ্রেশন দিতে পারব কি না!”
অভিনয়ের বাইরে তমা নিজেকে ও পরিবারকে সময় দেন। গান শোনেন, বই পড়েন, রান্না করেন। তাঁর কাছে রান্নাও একটি শিল্প। তিনি বলেন, “রান্না করতে ভালোবাসি। গরুর মাংস, মুরগি, হাঁস, খাসি—সব মাংসের কারি আমার হাতে ভালো হয়, সবাই মজা করে খায়। নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করি। এটা আমার জন্য আনন্দের কাজ।”
তবে রান্নার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন একা থাকা। তিনি বলেন, “এক কাপ চা হাতে নিয়ে ঘরের ভেতরে হেঁটে বেড়াই। ভাবি, জীবনে কী ভুল করেছি, কেন করেছি। কীভাবে শোধরানো যেত। এখনো কি কিছু ভুল করছি? ভবিষ্যতে ভুল যাতে না হয়, তার পরিকল্পনা করি। এই একাকিত্বই আমাকে নতুন করে ভাবতে শেখায়।”
পর্দার বাইরে রাফী-তমা
তমার সাম্প্রতিক আলোচিত কাজগুলোর বেশিরভাগই রায়হান রাফীর পরিচালনায়। তাঁদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের গুঞ্জনও শোনা গেছে। কেউ কেউ বলেছেন, তাঁরা প্রেম করছেন বা বিয়ে করতে চলেছেন। তবে এ বিষয়ে তমার অবস্থান স্পষ্ট। তিনি বলেন, “‘সুড়ঙ্গ’র পর রায়হান রাফীর সঙ্গে বড় পর্দায় আমার আর কোনো কাজ হয়নি। ওটিটিতে একটি কাজ হয়েছে, তবে বর্তমানে আমাদের একসঙ্গে কাজের সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। অবশ্যই রাফী একজন ভালো পরিচালক। আমাদের কাজগুলো দর্শকের কাছে জনপ্রিয় ও প্রশংসিত হয়েছে, এমনকি ব্যবসায়িক সাফল্যও পেয়েছে। এসব কারণেই হয়তো বলা হয়েছে, রাফী-তমা অফ স্ক্রিনেও একটি সফল জুটি। আগের কোনো বিষয় নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না। কারণ, তা একান্তই ব্যক্তিগত। তবে এটা ঠিক, তারকাদের ব্যক্তিগত বিষয় খুব একটা ব্যক্তিগত থাকে না। তাই বলছি, আমাদের অফ স্ক্রিনে একসঙ্গে দেখার সম্ভাবনা একেবারেই নেই, আর অন স্ক্রিন সম্ভাবনাও আপাতত নেই।”
তমা আরও বলেন, “প্রেম, বন্ধুত্ব, বিয়ে—যেটাই বলা হোক, একসঙ্গে আড্ডা, দেখা বা কথাবার্তা—এসবকে আমি ছন্দপতন মনে করি না। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলায়। আমি আমার মতো করে আছি, আমরা আমাদের মতো করে এগোচ্ছি—এটাই সবচেয়ে ভালো। একই জায়গায় কাজ করি বলে দেখা হতেই পারে, কথাও হতে পারে, আড্ডাও হতে পারে।”
সংসারভাবনা
বিয়ে নিয়ে এখন তেমন ভাবছেন না তমা। অভিনয়ই তাঁর প্রথম ও প্রধান ভাবনা। তিনি বলেন, “সংসার করতে হলে আগে মনস্থির করতে হয়। কাউকে বিয়ে করে সংসার করব—এমন মানুষ এখনো পাইনি। জীবনের পথে চলতে গিয়ে অনেকেই বন্ধু হয়ে আসে, কেউ থেকে যায়, কেউ চলেও যায়। আবার এটাও বলা যাবে না যে আমার জীবনে প্রেম একবারই এসেছিল। একজনকেই ভালোবেসেছি, আর কাউকে পারিনি—এটাও নিছক মিথ্যা হবে। প্রেম বারবার আসতে পারে। কেউ কেউ হয়তো ভালোবেসে সারা জীবন একজনের সঙ্গেই কাটিয়ে দেন। তবে এই সময়ে এসে এমন কাউকে পাওয়া সত্যিই কঠিন। জীবনের যেসব সময়ে প্রেম এসেছে, ভালোবাসা এসেছে, তখন হয়তো ভেবেছি, বিয়ে করব, সংসার করব, নিজেকে স্থির করব। কিন্তু এখন যেহেতু জীবনে এমন কেউ নেই, তাই তেমন কিছু ভাবছি না। তবে হঠাৎ বৃষ্টির মতো যদি কেউ আসে, যদি মনে হয় তাঁর সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব, তখনই বিয়ে করব।”