রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আলোচিত মডেল মেঘনা আলমের জব্দকৃত পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিভাইসে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এসব জিনিস কেন মেঘনার জিম্মায় ফেরত দেওয়া হবে না, তার কারণ দর্শাতে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আগামী ৩১ আগস্ট ২০২৫-এর মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই ২০২৫) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন।
মেঘনা আলমের জব্দকৃত জিনিসের মধ্যে রয়েছে একটি পাসপোর্ট, আইফোন-১৬ প্রো, ম্যাকবুক, অপো মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ। মেঘনার আইনজীবী মহিমা বাঁধন ও মহসিন রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, মেঘনা একজন লিডারশিপ ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য প্রায়ই বিদেশে যেতে হয়। এ কারণে তারা প্রাথমিকভাবে পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে আদালতে শুনানি করেছেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মেঘনা আলম, ব্যবসায়ী দেওয়ান সমির এবং অজ্ঞাতপরিচয় দুই-তিনজন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিক, প্রতিনিধি এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতেন। পরবর্তীতে সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতেন। অভিযোগে বলা হয়, গত ২৯ মার্চ ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় গোপন বৈঠকে মেঘনা ও সমিরসহ কয়েকজন একজন কূটনীতিকের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করার সিদ্ধান্ত নেন। এই কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মেঘনা আলমকে গত ৯ এপ্রিল ২০২৫ রাতে বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন ১০ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে এই আটকাদেশ বাতিল হলে ১৭ এপ্রিল ধানমন্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই মামলায় তিনি ৫ দিন এবং পরে আরও ৪ দিনের রিমান্ডে ছিলেন। অবশেষে ২৮ এপ্রিল আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন, এবং ২৯ এপ্রিল তিনি কারামুক্ত হন।
আদালতে মেঘনা আলম দাবি করেছেন, তিনি একজন মডেল নন, বরং পলিটিক্যাল লিডারশিপ ট্রেইনার। তিনি আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো রাষ্ট্রদূতের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ নেই। “যে রাষ্ট্রদূতের কথা বলা হচ্ছে, তিনি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে আদালতে এসে প্রমাণ দিক,” বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। মেঘনা দাবি করেন, তাকে গ্রেপ্তার নয়, বরং বাসা থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।
মামলায় মেঘনার সহযোগী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে ব্যবসায়ী দেওয়ান সমিরের নাম, যিনি কাওয়াই গ্রুপের সিইও এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ছিল। অভিযোগে বলা হয়, সমির তার প্রতিষ্ঠানে আকর্ষণীয় মেয়েদের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে যোগাযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা করতেন। সমিরকে ১২ এপ্রিল ভাটারা থানার একটি প্রতারণা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
আদালতের নির্দেশে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মেঘনার জব্দকৃত ডিভাইসে রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান আছে কিনা তা যাচাই করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, এসব ডিভাইসের মালিকানা যাচাই করে ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই মামলার পেছনে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, অর্থ লেনদেন এবং স্পর্শকাতর তথ্যের বিনিময়ের বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে।
এই ঘটনা বাংলাদেশের আইনি ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মেঘনা আলমের মামলা এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তদন্তের পরবর্তী ধাপে কী মোড় নেয়, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি এখন আদালতের দিকে।