বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট, ২০২৫) অরুণা বিশ্বাস ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেন, যেখানে তিনি কানাডায় একটি মেট্রো ট্রেনে দুই বাঙালি মেয়ের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “মুভি দেখে মেট্রোতে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ দুটি মেয়ে ইংরেজিতে আমার সঙ্গে কথা শুরু করে। তারা বলে, ‘আমরা তোমাকে চিনি, তুমি বাংলাদেশের সেলিব্রেটি। ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে তোমার মুভি লুকিয়ে দেখতাম।’ তারা গুগলে আমাকে মিলিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়।” অরুণা আরও বলেন, “মেট্রোর সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছিল, ছবি তুলছিল। আমার কত যে আনন্দ হচ্ছিল, নিজেকে সম্মানিত মনে হচ্ছিল। আর মনে হলো—আবার ফিরতে হবে আমার জায়গায়, যে জায়গা একান্তই আমার।” এই পোস্টে তিনি মানুষের ভালোবাসা ও জনপ্রিয়তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, যা তার বাংলাদেশে ফেরার ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অরুণা বিশ্বাস ১৯৬৭ সালে মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অমলেন্দু বিশ্বাস একুশে পদকপ্রাপ্ত যাত্রা ও মঞ্চশিল্পী এবং মা জ্যোৎস্না বিশ্বাসও ছিলেন যাত্রা অভিনেত্রী। ১৯৮৬ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেকের পর তিনি ১০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং জাত্রাভিশন প্রযোজনা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ‘অসম্ভব’ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন এবং টেলিভিশন নাটক নির্মাণেও সক্রিয়।
২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অরুণা আওয়ামীপন্থি শিল্পীদের সঙ্গে ‘আলো আসবেই’ নামক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত ছিলেন। সেখানে তিনি ছাত্রদের ওপর ‘গরম পানি ছিটানোর’ পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে স্ক্রিনশট ফাঁস হলে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। এই ঘটনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ অনেকে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। পরে তিনি এই মন্তব্য অস্বীকার করলেও, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট, ২০২৪-এ তিনি দেশ ছেড়ে কানাডায় চলে যান। ফেসবুকে তিনি লিখেছিলেন, “প্রিয় জন্মভূমি আমার, ভালো থেকো বাংলাদেশ।”
কানাডায় অরুণার মা, ছেলে, ভাই ও তার পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তিনি নিজেও অনেক আগে কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তবে দেশের বিনোদন জগতের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। সম্প্রতি তিনি একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) অনুষ্ঠান পরিচালনা বিভাগের পরিচালক হতে চেয়েছিলেন।
অরুণার সাম্প্রতিক পোস্টে দেশে ফেরার ইঙ্গিত থাকলেও, সামাজিক মাধ্যমে এটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ তার প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানালেও, অনেকে তার পূর্বের বিতর্কিত মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে সমালোচনা করেছেন। তবে অরুণা নিজে এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি, এবং তার ফেরার পরিকল্পনা এখনও জল্পনার পর্যায়েই রয়ে গেছে।