২৫ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী জানান, তিনি ট্রোলিং, উপহাস এবং এমনকি ইন্ডাস্ট্রিতে নিষিদ্ধ হওয়ার মতো ঘটনার শিকার হয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “আমি এখন প্রতিটি সেই ব্যক্তির মুখোশ খুলে দেব, যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছেন। আমাকে নিয়ে ট্রোল করা, মিম বানানো—এসব বন্ধ হোক। অভিনেত্রীদের জীবন কতটা কঠিন আপনাদের ধারণা নেই।”
২০২১ সালে ‘ব্রাইডাল কিটিওয়্যার উইক’-এ সংগীতশিল্পী শাজিয়া মানজুরের সঙ্গে র্যাম্পে হাঁটার সময় আলিজের হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। প্রথমে এটিকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলা হলেও, এবার তিনি দাবি করেছেন, এটি ইচ্ছাকৃত ছিল। আলিজে বলেন, “আমরা ডান দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাত শাজিয়া মানজুর আমাকে টেনে মেঝেতে ফেলে দেন। পুরো শো’জুড়ে তিনি আমার কোমরে হাত রেখেছিলেন এবং বারবার আমাকে ফেলার চেষ্টা করছিলেন।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, শাজিয়া পরে টিকটক তারকা জান্নাত মির্জা এবং উপস্থাপিকা জুগন কাজিমের সঙ্গে মিলে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন এবং অন্য অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করার জন্য অন্য তারকাদের সঙ্গে হাঁটতেন।
আলিজে শুধু ব্যক্তিগত অপমান নয়, পাকিস্তানের বিনোদন জগতের পেমেন্ট প্রক্রিয়ারও তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের পারিশ্রমিকের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। আমরা আমাদের নিজের টাকা চাইতে চাইতে ক্লান্ত হয়ে যাই। তিন মাস পর একটা চেক হাতে দিলে মনে হয় তারা যেন আমাদের দয়া করে কিছু দিচ্ছে। এই কারণেই আমি কাজ ছেড়ে দিয়েছি।” তিনি দাবি করেন, এই অবস্থার বিরুদ্ধে মুখ খোলার কারণে তাকে ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ করা হয়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় টাকা দিয়ে তার বিরুদ্ধে ট্রোল ছড়ানো হয়েছে।
আলিজে আরও জানান, “ডিরেক্টররা মিটিংয়ে আমাকে ডাকে, কিন্তু কাজ না দিয়ে বলে, ‘তোমার ইমেজ খুব খারাপ, আমরা তোমাকে নিতে পারি না।’ যদি কাজ না দিতে চাও, তাহলে মিটিং ডেকে এই অপমান কেন? আমি কারো সম্পত্তি নই, আমার ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার তাদের নেই।”
এক বছর আগে আলিজের বিরুদ্ধে একজন সহ-অভিনেত্রীর দিকে সিগারেট ছুঁড়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। এটি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “সে আমাকে ধাক্কা দেয়, আমি পড়িনি। এরপর সে আমাকে চড় মারে। আমি হতবাক হয়ে যাই। পরে সে সবাইকে বলে আমি নাকি তার দিকে সিগারেট ছুঁড়ে মারি।” তিনি জানান, ঘটনাটি শুটিংয়ের সময় ক্যামেরায় রেকর্ড হলেও সিগারেট ছোড়ার কোনো দৃশ্য ছিল না। তবে তিনি স্বীকার করেন, পরে তিনি ঐ অভিনেত্রীর রুমে গিয়ে তাকে লক্ষ্য করে স্যান্ডেল ছুঁড়েছিলেন, কিন্তু স্পর্শ করেননি। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি স্যান্ডেল ছুঁড়েছি। কিন্তু আমি তোমাকে স্পর্শও করিনি। তুমি কী ভয়ংকর একজন মানুষ!” তবে পুলিশে অভিযোগ করতে তাকে বারণ করা হয়েছিল, যাতে নাটকের কাজ বন্ধ না হয়।
শারীরিক স্পর্শ নিয়ে আলিজে বলেন, “যদি কোনো দৃশ্যে না থাকে, তাহলে আমাকে ছোঁয়ার কারো অনুমতি নেই। আমাকে আগে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমি কারো সম্পত্তি নই।” তার এই কঠোর ব্যক্তিগত সীমারেখা রাখার মানসিকতাই তাকে অনেক প্রযোজকের টার্গেটে পরিণত করেছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
আলিজে তার পোস্টের শেষাংশে বলেন, “যারা আমাদের নিয়ে ট্রোল করে, ব্যঙ্গ করে—তাদের বোঝা উচিত একজন নারী শিল্পীর জন্য পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কাজ করা কতটা কঠিন। আমাদের প্রতি সম্মান দেখান।” তিনি এও জানান, সহকর্মী অভিনেত্রী উরওয়া হুসেইন তার সমর্থনে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন, তার সাহসের প্রশংসা করে।
আলিজে শাহের এই সাহসী বক্তব্য পাকিস্তানের বিনোদন জগতে নারী শিল্পীদের নির্যাতন ও শোষণের একটি জোরালো চিত্র তুলে ধরেছে। এখন সবার দৃষ্টি এই দিকে, ইন্ডাস্ট্রি এই অভিযোগের জবাবে কী পদক্ষেপ নেয়।