Wednesday, July 30, 2025

‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র ৯০তম বছরে সুমন মুখোপাধ্যায়ের সিনেমার মুক্তি: প্রেসিডেন্সিতে আলোচনাসভা

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র ৯০তম বছরে মুক্তি পেতে চলেছে সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত একই নামের সিনেমা। দীর্ঘ ১৫ বছর ক্যামেরাবন্দি থাকার পর আগামী ১ আগস্ট, ২০২৫-এ এটি বড় পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে। মুক্তির পূর্বমুহূর্তে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা-অভিনেত্রীবৃন্দ, প্রেসিডেন্সির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সুমিত চক্রবর্তী এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সন্দীপকুমার মণ্ডল প্রমুখ।

উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমায় কুসুম চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। কুসুম চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে জয়া বলেন, “বরাবর নারীকেই কামনা ও বাসনার বস্তু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু কুসুমেরও নিজের কামনা-বাসনা রয়েছে, যা সে লুকোয় না। কুসুম একটা খোলা বইয়ের মতো।” ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে তিনি উপন্যাসের বিখ্যাত সংলাপ—“শরীর! শরীর! তোমার মন নাই কুসুম?”—এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, “মন দিয়ে তো মানুষকে ছোঁয়া যায় না। শরীর দিয়ে মন ছুঁতে হয়। আমার জীবনে মন ও শরীর—উভয়ের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস কুসুমেরও তাই।”

আলোচনাসভায় পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় সিনেমার প্রসঙ্গে বলেন, “১৫ বছর পর মুক্তি পেলেও সিনেমার গল্প সমসাময়িক। সেই সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আর এখনকার সময়ের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য খুঁজে পাই না। ঠিক যেমন পর্দার ‘কুসুম’ আর বাস্তবের জয়া আহসানের মধ্যে তেমন ফারাক নেই।” তিনি চিত্রনাট্যের উপর জোর দিয়ে বলেন, “‘শরীর শরীর শরীর, তোমার মন নেই কুসুম’—এই সংলাপ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। উপন্যাসে এটি শশীর না মানিকের নিজের কথা, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু চিত্রনাট্যে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে।”

সুমন আরও বলেন, “কুসুমের মন, শরীর ও আত্মা সব একরকম। এখানেই শশীর সঙ্গে তার পার্থক্য। কুসুম শশীর চরিত্রকে চ্যালেঞ্জ করে। তার মধ্যে কোনো জড়তা নেই। আমাদের সবার মধ্যে একটা লক্ষ্মণরেখা থাকে, কিন্তু কুসুমের মধ্যে তা নেই। এটাই তাকে আধুনিক করে। গ্রামবাংলার বাউলদের মতো তার দেহ, মন, আত্মা—সব মিলেমিশে এক।”

২০০৬ সালে সুমন মুখোপাধ্যায় এই উপন্যাসকে পর্দায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু বাধা এসেছিল গল্পের স্বত্ব ও প্রযোজকের অভাবে। প্রযোজনা সংস্থা ক্যালাইডোস্কোপের সমীরণ দাস এগিয়ে আসার পর এই সমস্যার সমাধান হলেও, অতিমারী বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সিনেমার চরিত্রদের ভাগ্যের পুতুল হিসেবে দেখা প্রসঙ্গে সুমন বলেন, “কমবেশি প্রত্যেকে। শশী যেমন হাজার চেয়েও গ্রামের বাইরে পা রাখতে পারেনি, আমিও তেমনি সিনেমা নির্মাণ করেও মুক্তি দিতে পারিনি।”

তিনি জানান, এই দীর্ঘ সময়ে তিনি শুটিংয়ের উপযুক্ত স্থানগুলোর ভিডিও সংগ্রহ করেছেন, যা সিনেমার নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সিনেমাটি ইতিমধ্যে রটারড্যাম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিগ স্ক্রিন প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে এবং ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রদর্শিত হবে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.