Friday, July 18, 2025

অবশেষে প্রেমে পড়লেন ৪২ বছরের ভার্জিন স্কুলশিক্ষক, আলোচনায় ‘আপ জ্যায়সা কোই’

 

১১ জুলাই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া হিন্দি সিনেমা ‘আপ জ্যায়সা কোই’ মুক্তির পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই সিনেমায় নির্মাতা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরতে চেয়েছেন—পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মনোভাব এবং নারীর যৌন চাহিদাকে ট্যাবু হিসেবে বিবেচনার প্রবণতা। ধারণাটি প্রশংসনীয় হলেও, নির্মাণগুণে সিনেমাটি কতটা সফল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সিনেমাটি ৪২ বছর বয়সী অবিবাহিত সংস্কৃত শিক্ষক শ্রীরেণু ত্রিপাঠির (আর মাধবন) গল্প নিয়ে। জামশেদপুরের একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করা শ্রী একটু প্রাচীনপন্থী। বইয়ের ভাঁজে ফুল গুঁজে রাখা, মধুবালার প্রতি ভক্তি—এসবই তার জীবনের অংশ। তার ভাবি কুসুম (আয়েশা রাজা) তার জন্য বিয়ের পাত্রী খুঁজতে ব্যস্ত, আর বন্ধু সুমিত (নমিত দাস) তার ‘ভার্জিন’ থাকার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। সুমিতের পরামর্শে শ্রী একটি ডেটিং অ্যাপে যোগ দেন, যেখানে প্রথম রাতেই তার জীবনে ঘটে অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে শ্রীর জন্য একটি বিয়ের প্রস্তাব আসে। পাত্রী মধু বোস (ফাতিমা সানা শেখ), কলকাতার ফ্রেঞ্চ শিক্ষিকা।প্রথম দেখাতেই মধুর সৌন্দর্য ও শিক্ষিত মনোভাবে মুগ্ধ হন শ্রী। তবে, তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না যে মধুর মতো মেয়ে তাকে পছন্দ করতে পারে। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, বিয়ের কথাও পাকা হয়। কিন্তু হঠাত শ্রী এমন একটি তথ্য জানতে পারেন, যা তার সংস্কারকে নাড়িয়ে দেয়। মধুর একটি আচরণ মেনে নিতে না পারায় পাকা বিয়েও ভেঙে যায়। মধু কি এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন, নাকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকেই হার মানতে হবে—এটাই সিনেমার মূল প্রশ্ন।

প্রোডাকশন, শিল্প নির্দেশনা, সেট ডিজাইন ও দেবজিত রায়ের সিনেমাটোগ্রাফি দৃষ্টিনন্দন। কফি হাউস, হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, বৃষ্টিতে গঙ্গার পাড়—সবই সিনেম্যাটিক। তবে নির্মাতা মূল বক্তব্যটি বারবার মোটাদাগে উপস্থাপন করায় দর্শক কিছুটা বিরক্ত বোধ করতে পারেন। পুরুষতান্ত্রিকতার প্রতীক হিসেবে শ্রীর ভাই ভানু ত্রিপাঠির (মনীশ চৌধুরী) চরিত্রটি অতিরঞ্জিত মনে হয়। তার সংলাপ “ওটিটি সবার চিন্তাচেতনা বিগড়ে দিয়েছে” হাস্যকর হলেও স্মরণীয়।

বাঙালি সমাজের চিত্রণে ক্লিশে প্রয়োগ করা হয়েছে। বাঙালি মানেই প্রগতিশীল, মাছপ্রিয়—এমন চিত্র ক্লান্তিকর। মধুর পরিবারে নারীর স্বাধীনতা ও পুরুষদের সমর্থনের যে চিত্র দেখানো হয়েছে, তা বাঙালি সমাজের পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধিত্ব করে না। সিনেমার প্রথমার্ধের গল্প জমলেও দ্বিতীয়ার্ধে গল্প খাপছাড়া হয়ে পড়ে। শ্রী ও মধুর প্রেমের রসায়ন পুরোপুরি জমে ওঠার আগেই ঘটনা ঘটতে থাকে। শ্রীর হঠাত বদল ও মধুর ম্রিয়মাণ ভাব বোধগম্য হয় না।আর মাধবন তার শান্ত, লজ্জাশীল চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। ফাতিমা সানা শেখ মধু চরিত্রে উজ্জ্বল। মনীশ চৌধুরী, আয়েশা রাজা ও নমিত দাস তাদের চরিত্রে ঠিকঠাক। তবে নিশা চরিত্রে শ্রিয়াম ভাগনানির অভিনয় গল্পে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। সিনেমার গান, বিশেষ করে মোহিত চৌহানের ‘যাব তু সাজন’ ও জাস্টিন প্রভাকরণ-রোচাক কোহলির সুর মন ছুঁয়ে যায়।

‘আপ জ্যায়সা কোই’ নামটি ১৯৭০-এর ‘কুরবানি’ সিনেমার নাজিয়া হাসানের গান থেকে নেওয়া। তবে এই সিনেমা দীর্ঘ মনে থাকবে কিনা, তা বলা কঠিন। এটি ‘বদ্রিনাথ কি দুলহানিয়া’, ‘টু স্টেটস’ বা ‘রকি অউর রানী কী প্রেম কাহানি’র মতো রোমান্টিক কমেডির স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। নারীর স্বাধীনতা ও সমাজের ট্যাবু নিয়ে সিনেমাটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেও নির্মাণে আরেকটু পরিশীলিত হলে এটি আরও প্রভাবশালী হতে পারত।



Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.