টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত জাহান সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের নানা দিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পাঁচ বছর আগের নুসরাত এবং বর্তমান নুসরাতের মধ্যে অনেক পার্থক্য তৈরি হয়েছে। প্রেম, বিয়ে, সন্তান এবং রাজনীতির উত্থান-পতনের গল্প তুলে ধরেছেন তিনি।
নুসরাত বলেন, এখন তিনি আর পার্টিতে যান না, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাও দেন না। সংসার আর কাজ নিয়েই তার সময় কাটে। তবে জীবনকে তিনি ‘ইন্টারেস্টিং’ বলে মনে করেন। যশ দাশগুপ্তের কাছ থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন। যশ ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কখনো প্রকাশ্যে কথা বলেন না, এবং তার থেকে শিখে নুসরাতও বুঝেছেন কোন বিষয় প্রকাশ্যে বলা উচিত আর কোনটা নয়। অভিনেত্রী স্বীকার করেন, আগে তিনি মনের কথা বলে ফেলতেন, যার ফল কখনো কখনো খারাপ হয়েছে।
সংসারের প্রসঙ্গে নুসরাত বলেন, বাড়িতে তিনি নায়িকা নন। বাজার, রান্না, সন্তানের খাওয়া—সবকিছু তিনি নিজেই সামলান। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হিসেবে মায়ের কাছ থেকে বাজেট করে সংসার চালানো শিখেছেন। ছেলে ঈশানের প্রতিটি বিষয় তিনি খুঁটিয়ে দেখেন এবং মজা করে বলেন, তার মধ্যে ‘হেলিকপ্টার মম’ সিনড্রোম আছে।
যশের প্রথম পক্ষের ছেলের বিষয়েও নুসরাত খোলামেলা কথা বলেন। তিনি জানান, তিনি শুরু থেকেই যশের বড় ছেলের কথা জানতেন এবং এ নিয়ে কোনো অস্বস্তি হয়নি। এখন তারা একসঙ্গে থাকেন, ঘুমান এবং তাদের মধ্যে সম্পর্কও ভালো। শুটিংয়ে গেলে তারা মাঝে মাঝে দুই ছেলেকে একে অপরের দায়িত্ব দিয়ে যান। নুসরাতের ভাষায়, “আমরা সবাই মিলে একটা পরিবার, এখন আমরা ভালো আছি।”
বিয়ে ও বিচ্ছেদ নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাকে ভুল বোঝা হয়েছিল। তিনি কখনো বলেননি যে বিয়ে করেননি। তবে আইনি জটিলতার কারণে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তিনি বলেন, “আইনসিদ্ধ হোক বা না হোক, বিয়ে তো হয়েছিলই। সময়ের অভাবে রেজিস্ট্রি করতে পারিনি। বাইরে বিয়ে হয়েছিল, ফিরেই সংসদে শপথ নিতে হয়েছিল। কাজের চাপে সময় চলে গেছে। এটা আমারই ভুল ছিল, ভক্তদের বোঝাতে পারিনি।”
রাজনীতির প্রসঙ্গে নুসরাত জানান, তিনি তার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়েছিলেন। তবে নানা অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এক সময় সবকিছু তাকে একাই সামলাতে হয়েছে, কারণ তখন যশ মুম্বাইয়ে ছিলেন এবং ছেলে ছিল ছোট। তিনি কেন্দ্রীয় এজেন্সির দপ্তরে গিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জবাব দিয়েছেন। তার সব কাগজপত্র সঠিক ছিল, তবুও কেন এত বিতর্ক তৈরি হলো তা তিনি বুঝতে পারেন না। তবে এই অভিজ্ঞতা তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।
২০২৬ সালের নির্বাচনে আবার ডাক পেলে কী করবেন—এমন প্রশ্নে নুসরাত বলেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলতে পারেন না। তবে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসেন। মমতা তাদের ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের সবসময় আগলে রেখেছেন, তাই তাকে কখনো ‘না’ বলতে পারবেন না।
নিজের ভেঙে পড়ার মুহূর্ত নিয়েও নুসরাত বলেন, অনেক সময় তার ওপর এমন ঘটনার দায় চাপানো হয়েছে, যেখানে তিনি জড়িত ছিলেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অচেনা মানুষও তার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা প্রকাশ্যে বলি, এসব কিছুই প্রভাব ফেলে না। কিন্তু আমি তো মানুষ। অনেকবার একা বসে কেঁদেছি। আবার নিজেকেই সামলাতে হয়েছে। সব পেরিয়ে এখন আমি নতুন মানুষ। কাজ, সংসার আর আমার জগৎ নিয়েই ভালো আছি।”
নুসরাত মনে করেন, আজকের তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত, বাস্তববাদী এবং জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ।