Monday, August 18, 2025

তৃপ্তি দিমরির সাহসী যাত্রা: ‘ধড়ক ২’ এবং অভিনয় জীবনের গল্প

 অভিনয় জগতে কোনো পারিবারিক পটভূমি ছাড়াই উত্তরাখণ্ড থেকে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন তৃপ্তি দিমরি। শুধুমাত্র অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন বুকে লালন করে তিনি পা রেখেছিলেন এই অচেনা শহরে। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাঁর নতুন ছবি ‘ধড়ক ২’। মুম্বাইয়ের জুহুর সান অ্যান্ড স্যান্ড হোটেলে এক আড্ডায় তৃপ্তি ফিরে গিয়েছিলেন তাঁর সেই সংগ্রামী দিনগুলোর স্মৃতিতে।

আবেগপ্রবণ কণ্ঠে তৃপ্তি বলেন, “‘ধড়ক ২’-এ আমার চরিত্র বিধি একজন সাহসী মেয়ে। বাস্তব জীবনেও আমি বিধির মতোই সাহসী। পরিবারের সবাই বিরোধিতা করলেও আমি অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বাইয়ে এসেছিলাম। তাঁরা আমার এই পথচলা নিয়ে ভয়ে ছিলেন। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। জানতাম, সঠিক পথেই হাঁটছি। অভিনেত্রী হওয়ার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলাম।”

তৃপ্তি জানান, তাঁর এবং বিধির মধ্যে শুধু সাহসের মিল রয়েছে। তিনি বলেন, “পরিচালক শাজিয়া ইকবালকে বলেছিলাম, আমি বিধির মতো নই। আমি বহির্মুখী নই, বরং শান্ত ও অন্তর্মুখী। ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। তবে বিধির চরিত্র আমাকে বদলে দিয়েছে। এখন আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পাই। আমি মনে করি, প্রত্যেকেরই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত।”

২০১৮ সালে জাহ্নবী কাপুর ও ঈশান খাট্টার অভিনীত ‘ধড়ক’ বক্স অফিসে সাফল্য পেয়েছিল। এর সিকুয়েল ‘ধড়ক ২’ মুক্তির আগে বক্স অফিসের চাপ অনুভব করেছেন কিনা, জানতে চাওয়া হলে তৃপ্তি বলেন, “আমি কোনো ছবির মুক্তির আগে চাপ নিই না। এতে অভিনয়ের আনন্দ মাটি হয়ে যায়। চাপ নিয়ে সেটে গেলে চরিত্রের প্রতি ন্যায় করা যায় না। ছবি হিট হবে না ফ্লপ, তা না ভেবে পুরো প্রক্রিয়াটা উপভোগ করি। শুটিং শেষে বাড়ি ফিরে মনে আনন্দ থাকাটাই বড় কথা।”

‘ধড়ক ২’ ছবিতে রোমান্স ও আবেগের পাশাপাশি জাতপাত ও বর্ণবাদের মতো সামাজিক বাস্তবতা উঠে এসেছে। তৃপ্তি বলেন, “এই ছবি আমাকে অনেক অজানা বিষয় শিখিয়েছে। আমরা প্রায়ই অন্যের জীবনের কষ্ট সম্পর্কে অজ্ঞ থাকি। অনেক সময় অন্যায় দেখেও চোখ বুজে থাকি। আমি বিশ্বাস করি, সিনেমা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। ‘ধড়ক ২’ যদি কিছু মানুষের মানসিকতায় বদল আনতে পারে, তাহলেই আমরা সফল।”

ছবিতে তৃপ্তি ও সিদ্ধান্ত চতুর্বেদীর রসায়ন দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। এই রসায়নের পেছনের গল্প জানিয়ে তৃপ্তি বলেন, “পরিচালক শাজিয়া চেয়েছিলেন আমি ও সিদ্ধান্ত যেন একে অপরকে গভীরভাবে বুঝি। আমাদের জন্য লম্বা একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছিল। শুধু সিদ্ধান্তের সঙ্গে নয়, অন্য অভিনেতাদের সঙ্গেও সখ্য গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। আমরা কলেজপড়ুয়াদের মতো আড্ডা দিতাম, গেম খেলতাম। তাই সেটে সবার সঙ্গে সহজ ছিলাম।”

আট বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে তৃপ্তি ‘বুলবুল’, ‘কলা’র মতো সমাদৃত প্রকল্প উপহার দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার প্রথম ছবি ‘পোস্টার বয়েজ’ ও ‘লায়লা মজনু’ বক্স অফিসে সফল না হলেও আমি সততার সঙ্গে কাজ করেছিলাম। প্রতিটি চরিত্রের প্রতি আমি সমানভাবে নিবেদিত। ক্যারিয়ার নিয়ে শুরু থেকেই সচেতন ছিলাম। কিছু ছবি চলেছে, কিছু চলেনি। তা না ভেবে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করে যেতে চাই।”

সময়ের সঙ্গে নিজেকে আরও উন্নত অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তুলছেন তৃপ্তি। তাঁর ভাষায়, “আমার ফিল্মি যাত্রা নিয়ে আমি ভীষণ খুশি। এই যাত্রার কিছুই বদলাতে চাই না। পথে অনেক ভুল করেছি, সময়ের সঙ্গে তা শুধরে নিয়েছি। কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েই আমার আক্ষেপ নেই।”



Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.