Friday, August 22, 2025

শাহী কবিরের ‘রন্থ’: পুলিশ জগতের মানবিক গল্প

মালয়ালম চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা শাহী কবির, যিনি আগে পুলিশ সদস্য ছিলেন, তাঁর সিনেমায় বারবার পুলিশি জগতের গল্পকে কেন্দ্র করেছেন। নিজের পুলিশি অভিজ্ঞতা থেকে তিনি পর্দায় উঠিয়েছেন নায়কোচিত পুলিশের ভিন্ন রূপ—কখনো তদন্ত ধারার মোটিফে, কখনো মানবিক সম্পর্কের গভীরতায়। ‘জোসেফ’, ‘নায়াত্তু’, ‘অফিসার অন ডিউটি’ ও ‘এলা ভিজহা পুনছিরা’ চলচ্চিত্রে তিনি পুলিশকে নতুনভাবে চিত্রিত করেছেন। তাঁর দ্বিতীয় পরিচালিত সিনেমা ‘রন্থ’ও এর ব্যতিক্রম নয়।

তবে এবার তিনি পুলিশি তদন্ত সিনেমা বানাননি; বরং এক রাতের প্যাট্রল ডিউটিতে থাকা দুই পুলিশ সদস্যের গল্প উপস্থাপন করেছেন। গল্পের চেয়ে এটি একটি যাত্রা, যার শেষ ১৫ মিনিট দর্শককে নাড়িয়ে দেবে। তিন বছর পর নির্মাতা হিসেবে ফিরে কবির প্রমাণ দিয়েছেন পুলিশি গল্প কতটা বাস্তবঘেষ্ট হতে পারে।

‘রন্থ’–এ কাহিনি ঘোরে নবীন ও বয়োজ্যেষ্ঠ দুই পুলিশ সদস্যের চারপাশে। ইওহানন (দীলেশ পোথান) ও দিন্নাথ (রোশন ম্যাথিউ)—অভিজ্ঞ ও আদর্শবাদী একজনের সম্পর্কের রসায়ন প্রথমে ‘ট্রেনিং ডে’ বা ‘সেভেন’ মনে করাবে। কেরালার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাতের ডিউটিতে জাত-প্রথা, দুর্ঘটনা, অস্বাভাবিকতা ও অতিপ্রাকৃত ভয়ের সম্মুখীন হন তারা। দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সিনেমার মেজাজে ঘটে ভয়াবহ রূপান্তর, যেন ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ থেকে ‘হেরেডিটারি’র মতো ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছায়।

ইওহানন পেশাগত নিষ্ঠুরতায় ক্লান্ত, দিন্নাথ আদর্শবাদী ও সিস্টেমের আড়ালের ‘ভূত’ সম্পর্কে অজ্ঞ। কিন্তু দুজনেই ব্যবস্থার শৃঙ্খলে বাঁধা। ইওহানন জানালার শিকের ওপারে হাঁটার দৃশ্য প্রতীকী কারাবাস বোঝায়। এক দুর্ঘটনায় পাদরি থেকে টাকা নেওয়ার দৃশ্যে তিনি ঘুষ প্রত্যাখ্যান করেন, তবে জিপ মেরামতের জন্য টাকা নেন—এমন ছোট মুহূর্ত ‘রন্থ’কে বাস্তবের প্রতিচ্ছবি করে।

রাতের দায়িত্বে দ্বন্দ্বের মধ্যে ইওহাননের শিশুদের প্রতি নরম মনোভাব দিন্নাথের সঙ্গে সেতু গড়ে। দিন্নাথের সন্তান ও অসুস্থ মায়ের জন্য উদ্বেগ ইওহাননের কঠিন আবরণ ভেদ করে, যিনি স্ত্রীর সন্তানহারের শোকে আজও ভোগেন। দিন্নাথে তিনি নিজের পুরোনো আদর্শ খুঁজে পান।

সিনেমা ‘বাডি কপ’ থ্রিলারের মতো শুরু হয়, কিন্তু বাস্তবতা এত নির্মম যে প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। রাত গভীর হওয়ায় জটিলতা বাড়ে। এক দলিত যুবকের মৃত্যু তাদের জীবন পালটে দেয়। ইওহানন ও দিন্নাথ রক্ষক থেকে সিস্টেমের শিকার হন। উর্ধ্বতন কর্তা তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার চাপ দেয়। ইওহানন বলেন, “আদালতে দেখা হবে,” কিন্তু দিন্নাথ ভেঙে পড়ে, পরিবার ও অপরাধবোধে বিশ্বাসঘাতকতা করে। পরে জানা যায়, দুজনকেই আদালতে নেওয়া হবে।

দীলেশ পোথান ও রোশন ম্যাথিউ অসাধারণ অভিনয়ে চরিত্রকে জীবন্ত করেন। ‘রন্থ’ শাহী কবিরের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর নয়, কিন্তু মানবিকতায় সমৃদ্ধ। শেষে দর্শক বোঝেন, পুলিশের পোশাকের নিচে মানুষ হারিয়ে যায় রাতের ডিউটিতে।


Share This Post

শেয়ার করুন

Author:

Note For Readers: The CEO handles all legal and staff issues. Claiming human help before the first hearing isn't part of our rules. Our system uses humans and AI, including freelance journalists, editors, and reporters. The CEO can confirm if your issue involves a person or AI.